আমি এমন বাবার সাথে কেমন আচরণ করবো যে তাগুতের নিরাপত্তা বাহিনীতে চাকুরি করে?


আল হামদুলিল্লাহ এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর উপর।

আমার সম্মানিত বোন, বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে আপনার বাবার কুফরী সুস্পষ্ট। আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও নিরাপত্তার অধিকারী নেই। কারণ আপনার বাবা যে শুধুই তাগুতের বাহিনীতে কর্মরত তাই নয় তিনি এমন কি মহাপরাক্রমশালী আল্লাহকে ব্যাঙ্গ এবং অপমান করেছেন এবং তিনি নামাজ পড়েন না এবং হিজাবের ব্যাপারে এবং নবী (সাঃ) এর সুন্নাতের ব্যাপারে হাস্য-কৌতুক করেছেন।

এটা আল্লাহর তরফ থেকে আপনার জন্য এক পরীক্ষা। সুতরাং আপনি ধৈর্য্যশীল হোন এবং দৃঢ়তার সাথে আপনার ঈমানকে আঁকড়ে ধরুন। এবং আপনাকে হেদায়াত দান করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করুন। আমরা সবাই জানি নবী (সাঃ) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় পাত্রের একজন কিন্তু তারপরও তাঁর চাচা আবু লাহাব এবং আবু তালিব মুশরিক হিসাবে মারা যান।

যখন নবী ইবরাহীম (আঃ) এর পিতা বার বার কুফরি করেছিলেন, আল্লাহ তখন ইবরাহিম (আঃ) এর সম্মানে নিচের আয়াতগুলো নাজিল করেন।

وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَنْ مَوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِلَّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌ

ইবরাহীম তাঁর পিতার জন্য এজন্যই ক্ষমা প্রার্থনা করছিল যে, সে তাঁর পিতার কাছে আগেই এক ওয়াদা করে রেখেছিল। কিন্তু যখন তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে পড়ে যে সে (তাঁর পিতা) আল্লাহর শত্রু। তখন তিনি নিজেকে তার (পিতা) থেকে মুক্ত করে নিলেন। নিশ্চয়ই ইবরাহিম তাঁর দো’আর প্রতি ছিল একনিষ্ঠ এবং কোমল হৃদয়ের। (সূরা তাওবাহঃ ১১৪)

আমার সম্মানিত বোন, এটা আপনার জন্য জানা জরুরি যে আপনার বাবার ধর্মীয় অভিভাবকত্ব মেনে চলা আপনার উপর বাধ্যতামূলক নয়। তার প্রতি আপনার সম্পর্ক শুধুই হবে দয়া দেখানোর জন্য।

যা নবী (সাঃ) নিজে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেনঃ

إن آل أبي فلان ليسوا بأوليائي، إنما أوليائي المتقون، ولكن لهم رحم أبلها ببلالها

আবু অমুক তমুকের পরিবার আমাকে রক্ষাকারীদের কেউ নয়। আমার রক্ষাকারী হলেন আল্লাহ এবং সালেহীন মুমিন বান্দারা। তবে তাদের সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে এবং এজন্য আমি তাদের প্রতি ভাল এবং দায়িত্বশীল হব।
এর মানে হল অভিভাবকত্ব হল শুধুই দয়া দেখানো। এই হাদিস থেকে শিক্ষা নেয়া যায় যে কুফফারদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে দয়া দেখানো কোন প্রতিবন্ধকতা নয়।
ইমাম জাসসাস (রঃ) বলেনঃ

قوله تعالى : {يا أيها الذين آمنوا لا تتخذوا آباءكم وإخوانكم أولياء إن استحبوا الكفر على الإيمان} فيه نهى للمؤمنين عن موالاة الكفار ونصرتهم والاستنصار بهم وتفويض أمورهم إليهم وإيجاب التبري منهم وترك تعظيمهم وإكرامهم وسواء بين الآباء والإخوان في ذلك , إلا أنه قد أمر مع ذلك بالإحسان إلى الأب الكافر وصحبته بالمعروف بقوله تعالى : {ووصينا الإنسان بوالديه…}- إلى قوله { وإن جاهداك على أن تشرك بى ما ليس لك به علم فلا تطعهما وصاحبهما في الدنيا معروفا

আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা তোমাদের বাবা (মা) এর থেকে সম্পর্ক ছিন্ন কর যদি তারা ঈমানের উপর কুফরীকে ভালবাসে।’ এই আয়াতে আল্লাহ তা’আলা কুফফারদের সাথে বন্ধুত্ব করতে, তাদের থেকে সাহায্য নিতে বা, তাদের কাছে সাহায্য চাইতে এবং কোন দায়িত্ব অর্পন করতে নিষেধ করেছেন। এবং তিনি মু’মিনদের প্রতি বাধ্যতামূলক করেছেন কুফফারদের থেকে প্রকাশ্য ভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করা। এবং কুফফারদেরকে সম্মান দেখানো তাদের প্রশংসা করা নিষেধ করেছেন যদিও তারা তাদের মাতাপিতা অথবা, সহোদর হোক না কেন। যদিও একজন কুফফার বাবার প্রতি দয়াশীল হতে এবং তার উপকার করাকে ফরজ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমরা লোকদেরকে তাদের পিতামাতার প্রতি দয়ালু হওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু যদি তারা তোমাদেরকে আমার সাথে শরিক করতে বলে তাহলে তোমরা তাদেরকে মান্য কর না। তবে তাদের প্রতি দয়ালু হও।’ (আহকামুল কুরআন, ৪/২৭৮)
সুতরাং আপনি আপনার বাবার সাথে দয়ার সম্পর্ক এবং ভাল আমলের মাধ্যমে জুড়ে থাকুন। আল্লাহ বলেনঃ

 وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا

“তাদের প্রতি এই দুনিয়ার জীবনে সদয় হও” (সূরা লোকমানঃ ১৫)
ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ

والآية دليل على صلة الأبوين الكافرين بما أمكن من المال إن كانا فقيرين، وإلانة القول والدعاء إلى الإسلام برفق. وقد قالت أسماء بنت أبي بكر الصديق للنبي عليه الصلاة والسلام وقد قدمت عليه خالتها وقيل أمها من الرضاعة فقالت: يا رسول الله، إن أمي قدمت علي وهي راغبة أفأصلها؟ قال: (نعم). وراغبة قيل معناه: عن الإسلام. قال ابن عطية: والظاهر عندي أنها راغبة في الصلة، وما كانت لتقدم على أسماء لولا حاجتها

 

এই আয়াত হল দলীল যেঃ একজনের উচিত হবে সে যেন তার কুফফার পিতামাতাকে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করে যদি তারা দরিদ্র হোন এবং তাদের সাথে নরম ভাষায় কথা বলা উচিত এবং তাদের জন্য দোআ করা উচিত যেন তারা বিশ্বাসী হতে পারেন। আসমা (রাঃ), আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর মেয়ে বর্ণনা করেন যে, একবার আমার একজন চাচী আমাকে দেখতে আসলেন যিনি আমি যখন বাচ্চা ছিলাম তখন আমাকে বুকের দুধ খাইয়েছিলেন। তখন আমি জিজ্ঞেস করি, “হে আল্লাহর নবী (সাঃ) আমার মা এসেছেন এবং তিনি আগ্রহী। আমি কি তার প্রতি দয়ালু আচরণ করবো? তিনি বললেন, “হ্যাঁ। – (তাফসীর কুরতুবী, ১৪/৬৫)

এখানে আগ্রহী বলতে বুঝানো হচ্ছে যে তিনি ইসলামের প্রতি আগ্রহী। ইবনে আতিয়া বর্ণনা করেন যে, আমার কাছে মনে হয় তিনি ইসলামের প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং তিনি অপ্রয়োজনে আসমা (রাঃ) এর ঘরে বেড়াতে যান নি।

সম্মানিত বোন! আমি আপনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের পরামর্শ দিতে পারি। যেন আপনি এই ব্যক্তির ভরণ-পোষণ থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারেন ফলে সে আপনার ঈমানের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

আর বিবাহের জন্য যে ধর্মীয় অভিভাবকত্বের দরকার হয় তার ব্যাপারে বলছি, আপনি আপনার বাবার কোন নিকট আত্মীয়কে অথবা, আপনার খালার কোন ছেলেকে বাছাই করে নিতে পারেন যার ঈমান সম্বন্ধে আপনি ভালো ধারনা রাখেন।

এবং যদি আপনার বংশীয় মুরব্বী অথবা খালাদের সন্তানদের মধ্যে থেকে নিজের জন্য যদি কাউকে ওয়ালী হিসেবে না পান, তবে আপনি অন্য কোন মুসলিম ব্যক্তি অথবা কোন মুসলিম সংগঠনকে আপনার বিয়ের ওয়ালী হিসেবে বেছে নিতে পারেন। যেন আপনার পিতার সাথে এমন জটিল পরিস্থিতিতে না পরে যান, যা আপনার ক্ষতির দিকে গড়াবে।
এটাও সম্ভব যে, আপনি বর্তমানে স্বাভাবিক যে পদ্বতি চালু আছে সে পদ্বতিতে আপনার আক্বদ সম্পন্ন করে ফেলতে তাকে সুযোগ দিয়ে দিলেন এবং পরে যখন আপনি আপনার জন্য কোন মুসলিম অভিভাবক বেছে নিতে পারবেন তখন তার অভিভাবকত্বে আক্বদ পুনরায় সম্পন্ন হবে।

এবং আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য যিনি সমগ্র জাহানের রব।
————————–
উত্তর দাতাঃ

শায়েখ আবু মুনযির আল-শানকিতি
শরীয়াহ কমিটির সদস্য
মিনবার তাওহীদ ও জিহাদ

Leave a comment

বাংলার সিংহ পুরুষ